পঞ্চরস তত্ত্ব


তরিকত ফাউন্ডেশন প্রকাশের সময় : আগস্ট ১৮, ২০২২, ৪:৫২ অপরাহ্ণ /
পঞ্চরস তত্ত্ব

পঞ্চরস তত্ত্ব

পঞ্চরস নিয়ে আমাদের সমাজে অনেক আলােচনাই শোনা যায়। অনেকে তো। ইহাকে আধ্যাতিক সাধনার অংশ হিসেবেই মনে করে। তবে বাউল মতে পঞ্চরসের আনাগোনা অধিকহারে পরিলক্ষিত হয়। রাউলরা তো পঞ্চরস পান করাকে তাদের সাধনার একটি অংশ হিসেবেই জানে।

পঞ্চরস নিয়ে কুরআন হাদিসে কোন আলোচনা নেই। কিন্তু পঞ্চরস নিয়ে ভ্রান্ত মতের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক সূফী সাধক পঞ্চরসকে হাকিকি দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন।

বাউল মতে যাকে পঞ্চরস বলা হয়, তাই ইসলামী শরিয়তে সম্পূর্ণ হারাম। তাই ইহা ভ্রান্ত। বাউলদের মতে পাঁচটি রসালো বস্তুকে পঞ্চ রস বলে। যথাঃ মল, মূত্র, ঋতুরক্ত, রতিজনিত স্ত্রী-পুরুষের ক্ষরিত রস ও বীর্য । অনেক বাউল এই পাঁচটি জিনিসকে একত্র করে পান করে থাকে (নাউযুবিল্লাহ)।

ভ্রান্ত মতের অনেকে আবার বলে থাকেন পঞ্চ রস হলো মল, মূত্র, রজঃ, বীর্য, নারীর দুগ্ধ । ভ্রান্ত মতের অনেকে আবার বলে পঞ্চরস হলো মল, মূত্র, রজঃ, বীর্য, লালা। ভ্রান্ত মতের আবার কেউ কেউ মত প্রকাশ করেন যে, পঞ্চরস হলো মল, মূত্র, রক্ত, রজঃ, বীর্য ।

আবার অনেকে বলে পঞ্চরস হলো সরল চন্দ্র, গরল চন্দ্র, রোহানী চন্দ্র, ধারা চন্দ্র, আদি চন্দ্র। যে যাই বলুক এগুলো সম্পূর্ণ হারাম এবং ভ্রান্ত মত ও পথ। এ ধরণের মত ও পথ হতে আল্লাহ সকলকে হেফাজত করুন। আমিন! 

তবে পঞ্চরস হলো রূপক শব্দের ব্যবহার। পঞ্চরস কোন মুখ দিয়ে পান করার বস্তু নয়। পঞ্চ অর্থ পাচ এবং রস অর্থ প্রেম । সুতরাং পঞ্চরস অর্থ হলো। পঞ্চ প্রেম বা পাঁচ প্রকারের প্রেম। এই পাঁচ প্রকারের প্রেমকেই রূপকের আড়ালে অনেক সূফী সাধক পঞ্চ রস বলে থাকেন। ইহাই হলো পঞ্চরসের হাকিকি অর্থ। ভালােবাসার আবার পঞ্চপ্রেম নিয়েও মতভেদ রয়েছে।

 কেউ বলেন এই পঞ্চপ্রেম হলোঃ 

১. সখ্য প্রেম ও বন্ধুর সাথে বন্ধুর প্রেম কে বলা হয় সখ্য প্রেম; 

২. বাৎসল্য প্রেমঃ সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার যে মায়া মহব্বত বা স্নেহ-ভালবাসা, তাকে বাৎসল্য প্রেম বলে;

৩. শান্ত প্রেমঃ পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের যে ভালবাসা তা হলো শান্ত প্রেম।

৪. মধুর প্রেমঃ স্বামী-স্ত্রীর পরস্পর প্রেম ভালবাসাকে মধুর প্রেম বলে।

৫. দাস্য প্রেমঃ মালিকের প্রতি দাসের বা গোলামের পরস্পর ভালবাসাকে দাস্য প্রেম বলে। জগতে এই পাঁচ প্রকার প্রেম বিদ্যমান রয়েছে। এই পাঁচ প্রকার প্রেমকে অনেকে রূপকের আড়ালে পঞ্চরস বলে থাকেন। এটা নিয়ে একটি গল্প ও প্রচলিত রয়েছে। 

 

গুরুঃ বলতো শিষ্য! কোন প্রেমে হয় গুরু ভক্তি? কোন প্রেমে গুরুকে ভক্তি করলে সেই ভক্ত পায় চিরমুক্তি? 

শিষ্যঃ গুরু! সখ্য প্রেমে হয় গুরু ভক্তি। 

গুরুঃ এই প্রেম তো কিছুই নয় রে। কতজনের মাঝেই তো বন্ধুত্ব হয়। 

শিষ্যঃ তাহলে শান্ত প্রেমে গুরুকে ভক্তি করব। কেননা সন্তান-ভালবেসে পিতা মাতার যতœ নেয়।

গুরু ও এ প্রেমের মাঝে থাকে মোহ।

শিষ্যঃ তাহলে বাৎসল্য প্রেমে গুরুকে ভক্তি করব।

গুরুঃ পিতা-মাতার ভালবাসা তুলনাহীন, কিন্তু এই প্রেমে গুরু ভক্তি হয় না।

শিষ্যঃ তাহলে দাস্য প্রেমে গুরুকে ভক্তি করব। দাসের মত পরে থাকব। 

গুরুঃ এত অল্পতেই কি মুক্তি পেতে চাস!