বিদ’আত কি? উহা কত প্রকার? ইসলামের দৃষ্টিতে বিদ’আত অপরাধ কি?
বিদ’আত আরবী শব্দ, যার অর্থ নতুন কিছু প্রবর্তন করা বা আবিষ্কার করা। ইসলামী পরিভাষায় হযরত রাসূল (সঃ)-এর ওফাতের পর ধর্মের ব্যাপারে নতুন যে সকল বিষয় ইসলামে সন্নিবিষ্ট হয়েছে, উহাই বিদ’আত বলে গণ্য হয়। আমাদের প্রচলিত ধারণামতে বিদ’আত একটি অতীব গর্হিত কাজ। কেননা, এগুলো রাসূল (স.)-এর সময়ে ছিল না। কিন্তু মানুষের আমলের সুবিধার্থে খোলাফায়ে রাশেদীনের অন্যতম হযরত ওসমান (রাঃ)-এর শাসনামলে পবিত্র কোরআনকে ৩০ পারায় বিভক্ত করা হয়েছে। উহা একটি উত্তম কাজ। সুতরাং বিদ’আত মাত্রই বর্জনীয় বা খারাপ বলা যায় না ।
হযরত রাসূল (স.)-এর আমলে উট ছিল প্রধান যানবাহন অথচ বর্তমান এই বিজ্ঞানের যুগে বহুবিধ উন্নততর যানবাহন আবিষ্কৃত হয়েছে। ফলে, এখন অতি অল্প সময়ে মানুষ অনেক দূরের পথ পাড়ি দিতে পারে। যানবাহনের এই নব আবিষ্কারকে নিশ্চয়ই গর্হিত বলা যাবে না। তবে রাসূল (স.)-এর পরে ইসলাম ধর্মের মৌলিক বিষয়ে কোন পরিবর্তন বা সংযোজন অবশ্যই গর্হিত কাজ বলে বিবেচ্য।
ধর্মবিশারদগণের মতে বিদ’আত ২ প্রকার। যথা- (১) সাইয়্যেয়াহ্। অর্থাৎ খারাপ উদ্দেশ্যের সাথে সম্পর্কযুক্ত এবং (২) হাছানাহ্- অর্থাৎ ভাল উদ্দেশ্যের সাথে সম্পর্কযুক্ত।
হযরত ইমাম সাতবীর (রহ.)-এর মতে ধর্মের মূল লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে পরিবর্তন পরিবর্ধন করলে তা গর্হিত, আর মূল লক্ষ্য বস্তুকে লাভ করার জন্য এক বা একাধিক উপায় উদ্ভাবন উত্তম শ্রেণীর বিদ’আত। হযরত ওসমান গনি (রাঃ) কর্তৃক পবিত্র কোরআন শুদ্ধভাবে সংকলন, পারা এবং রুকুতে বিভক্তকরণ, সিহাহ্ সিত্তা (৬ খানা নির্ভুল) হাদীস সংকলন, হযরত ওমর (রাঃ) কর্তৃক নারী ও পুরুষের একত্রে জামাতে নামাজ আদায় নিষিদ্ধকরণ, চারটি মাযহাব সৃষ্টি, বিভিন্ন তরীকা প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি উত্তম শ্রেণীর (হাছানাহ্) বিদ’আত। পক্ষান্তরে, মাওলানা ইলিয়াস কর্তৃক প্রবর্তীত মতাদর্শে ইসলামের মৌলিক বিষয় পরিবর্তন ও পরিবর্ধন গর্হিত (সাইয়্যেয়াহ্) শ্রেণীর বিদ’আত।
একশ্রেণীর বিদ’আত মঙ্গলজনক, এ কথা পূর্বেই বলা হয়েছে। যে সমস্ত ব্যবস্থা ইসলাম ধর্মে নতুন সংযোজনের ফলে মানুষ সহজে মূল লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে সেরূপ সংযোজন ইসলামের দৃষ্টিতে অপরাধ নয়। তবে উল্লেখ্য যে, যুগে যুগে রাসূলের আদর্শচ্যুত মুসলিম শাসকবর্গ ও অমুসলিমদের চক্রান্তে মনগড়া ব্যাখ্যা ও মাসআলা ধর্মে অনুপ্রবেশ করে সরলপ্রাণ বিশ্বাসীদের বিভ্রান্ত ও বিপথগামী করে থাকে। এ সমস্ত ক্ষতিকর সংযোজন থেকে ধর্মকে মুক্ত করে যুগোপযোগী সংস্কার সাধনের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক শতাব্দীতে সংস্কারক বা মোজাদ্দেদ প্রেরণ করে থাকেন।
যার স্বীকৃতি রাসূল (সঃ)-এর হাদীসেও রয়েছে। এ সকল মহামানব আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশে ধর্মে প্রবিষ্ট কুসংস্কার সমূহ চিহ্নিত করে ধর্মের সংস্কার সাধন করেন। ফলে ধর্ম নবজীবন লাভ করে অর্থাৎ রাসূল (সঃ)-এর জামানায় ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে যে চারিত্রিক পরিবর্তন সাধন হতো, আত্মিক উৎকর্ষতা লাভ হতো, মানুষ আল্লাহর আশেকে পরিণত হতো, তদ্রপ উক্ত মহামানব কর্তৃক ধর্মের সংস্কার সাধনের পর মানুষ তাকে পূর্ণভাবে অনুসরণের মাধ্যমে রাসূলের যুগের অনুরূপ ফায়দা লাভ করে থাকে।
এরূপ মহামানব সংস্কারের প্রয়োজনে ধর্মের যা কিছু পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করে থাকেন তা আল্লাহ ও রাসূল (সঃ)-এর হুকুমেই করে থাকেন, ফলে এরূপ সংস্কার মানুষের জন্য অবশ্যই উপকারী ও মঙ্গলজনক। পক্ষান্তরে অন্য যে কোন নতুন ব্যবস্থা যা পরিণামে মানুষকে বিভ্রান্তি ও কুপথে চালিত করে মূল লক্ষ্য থেকে দূরে সরিয়ে দেয়, সে জাতীয় বিদ’আত ইসলামের দৃষ্টিতে অবশ্যই অপরাধ।
কারণ আল্লাহর তরফ থেকে কোনো ফয়েজ বা নেয়ামত তার নিকট পৌঁছে না। এইরূপ ব্যাক্তি বেইমান হিসেবে মৃৃত্যু বরণ করে; তার আত্মা অবশ্যই কঠিন আজাবে নিপতিত হবে।
আপনার মতামত লিখুন :