মাযার চুম্বন করা বা মাযার প্রদক্ষিণ করা জায়েজ


তরিকত ফাউন্ডেশন প্রকাশের সময় : আগস্ট ১৫, ২০২২, ৬:০৮ অপরাহ্ণ /
মাযার চুম্বন করা বা মাযার প্রদক্ষিণ করা জায়েজ

মাযার চুম্বন করা বা মাযার প্রদক্ষিণ করা কি জায়েজ?

 

১নং দলীল:

বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফতহুল বারী ৬ষ্ঠ খ- ১৫ পৃষ্ঠায় আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী (রহঃ) উল্লেখ করেছেন,

 نقل عن الإمام أحمد رحمه الله أنه سئل عن تقبيل منبر النبي صلى الله عليه وسلم وتقبيل قبره قال قلم آری به بأسا وقل عن ابن أبي الصنف اليماني احد علماء مكة من الشافعية جوار تقبيل المصحف وأجزاء الحديث 

অর্থাৎ- “ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূল করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মিম্বার শরীফ ও রওযা মোবারক চুম্বন করার বৈধতা সম্পর্কে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জবাবে বলেন- আমি এতে ক্ষতিকর কিছু দেখছি না। মক্কা শরীফের শাফিয়ী মাযহাবভুক্ত উলামাদের মধ্যে অন্যতম আলেম ইবনে আবিস সানাফ ইয়ামানী থেকেও কুরআন মজিদ ও হাদীস শরীফের জুযদান এবং বুযুর্গানেদ্বীনের মাযার চুম্বন করা বৈধ বলে রেওয়ায়াত আছে বলে বর্ণিত আছে” (ফতহুল বারী শরহে বুখারী ৬ষ্ঠ খন্ড ১৫ পৃষ্ঠা)। 

উল্লেখিত দুজন উল্লেখযোগ্য ইমামের ভাষ্য অনুযায়ী রাসূল, নবী ও অলীগণের মাযার -এমনকি কুরআন ও হাদীস গ্রন্থের জুযদান চুম্বন করার বৈধতাও প্রমাণিত হলো। কেননা, কোরআন ও হাদীসের জুযদানের সম্মানের চেয়ে নবী অলীগনের মাযারের মাটির সম্মান অনেক বেশী। ইমাম বুখারীর মাযারের মাটি লোকেরা তাবারুক হিসাবে ব্যবহার করতো (ইমাম বুখারীর জীবনী)। 

 

২নং দলীল:

ফতোয়া আলমগিরী “কিতাবুল কারাহিয়াত বাবু যিয়ারাতুল কুবুর” অধ্যায়ে উলেখ আছে,

 بأس بتقبيل قبر والديه كذافي الغرانا

গারায়েব নামক কিতাবে উল্লেখ আছে যে, কোন ব্যক্তি কর্তৃক তার মাতার কবর চুম্বন করার মধ্যে কোন ক্ষতি বা মাকরূহ নেই।” (আলমগিরী)

অলীগণ যেহেতু পিতা-মাতার মতই সম্মানিত, তাই তাদের মাযার শরীফ করা বৈধ। 

 

৩নং দলীল:

কবর প্রদক্ষিণ করা বৈধ কিনা- এ সম্পর্কে আশ্রাফ আলী থানবির “হিফযুল ঈমান” নামক পুস্তিকায় জনৈক প্রশ্নকারীর একটি প্রশ্ন নিম্নরূপ ছিল, “হযরত শাহ্ ওয়ালিউল্লাহ সাহেব কাশফুল কুবুর-এর নিয়ম এরূপ বর্ণনা করেছেন যে,

 وبعده هفت کره طواف کند ودراں تکبیر بخواند وأنغازاز راست کند وبعده طرف پایاں رخساره نهد অর্থাৎ- “তারপর কবরকে সাত বার প্রদক্ষিণ করবে। এতে তাকবীর বলবে এবং ডান দিক থেকে শুরু করে পায়ের দিকে নিজের মুখ রাখবে”। এমতবস্থায় মাযার তাওয়াফ করা এবং কবরে চেহারা স্থাপন করা জায়েয কিনা”? আশ্রাফ আলী থানবী সাহেব হিফযুল ঈমান পুস্তিকার ৬ষ্ঠ পৃষ্ঠায় প্রশ্নকারীর প্রশ্নের জবাবে বলেন যে, “শাহ ওয়ালিউল্লাহর বর্ণিত উক্ত তাওয়াফ প্রকৃত পক্ষে শরীয়তের পরিভাষায় কাবা শরীফের নিয়মানুযায়ী তাওয়াফ নয়। কেননা, শরীয়তের পরিভাষায় কাবা ঘরের তাওয়াফের মধ্যে সম্মান ও নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্য নিহিত থাকে। কিন্তু কবরের তাওয়াফ হচ্ছে শাব্দিক অর্থে। অর্থাৎ নিছবতের বা রূহানী সম্পর্ক স্থাপনের জন্য কবর প্রদক্ষিণ করা এবং কবরস্থ অলীর রূহানী ফয়েয লাভ করা। অনুরূপভাবে কাশফুল কুবুর-এর নিয়ম হলো ফয়েয লাভ করার উদ্দেশ্যে এবং রুহানী সম্পর্ক সৃষ্টি করার লক্ষ্যে কবর প্রদক্ষিণ করা- ইহা জায়েয”। (হিফযুল ঈমান পৃষ্ঠা-৬)। 

 

পাঠকগণ লক্ষ্য করেছেন যে, শাহ ওয়ালিউল্লাহ সাহেব কবর বা মাযার প্রদক্ষিণের যে তরিকা ও নিয়ম বর্ণনা করেছেন, ওহাবী-নেতা আশ্রাফ আলি থানবী উক্ত প্রদক্ষিণ ও তাওয়াফ করাকে সমর্থন করতে বাধ্য হয়েছেন । হিফযুল ঈমান পুস্তিকার ৬ষ্ঠ পৃষ্ঠায়।