মারিফতের হজ্জ কি?


তরিকত ফাউন্ডেশন প্রকাশের সময় : আগস্ট ২, ২০২২, ৬:১৮ পূর্বাহ্ণ /
মারিফতের হজ্জ কি?

হজ্জ আরবী শব্দ। যার অর্থ সংকল্প করা, ইচ্ছা করা, জিলহজ্জ মাসের নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট নিয়ম মোতাবেক, আল্লাহর ঘর বাইতুল্লাহ শরীফকে, তাওয়াফ করার ইচ্ছা বা সংকল্প করাকে হজ্জ বলে।

হজ্জ দুই প্রকারঃ ১। শরীয়তের হজ্জ ২। মারিফত বা তরিকতের হজ্জ

শরীয়তের হজ্জের শর্তাবলী:

১। এহরাম বাঁধা।

২। মক্কা শরীফ প্রবেশ করা।

৩। বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করা।

৪। আরাফার মাঠে অবস্থান করা।

৫। মোজদালেফায় রাত্রি যাপন করা।

৬। মিনায় কুরবানী করা।

৭। হেরেম শরীফে প্রবেশ করা।

৮। যমযমের পানি পান করা।

৯। মাকামে ঈব্রাহীম তাওয়াফ করার নিয়তে ২ রাকাত নামাজ আদায় করা।

১০। এহরামের পর নিষিদ্ধ কাজসমূহ হইতে বিরত থাকা। সাফা মারওয়ায় সায়ী অর্থাৎ দ্রুত গতিতে চলা হজ্জের একটি প্রধান অঙ্গ।

উপরে উরোল্লিখিত নিয়ম নীতির ভিত্তিতে আদায় করাকে শরীয়তের হজ্জ বলে।

 

মারিফতের হজ্জ:

বুযুর্গদের সহচর্য হইতে তাদের নিকট থেকে, জিকির আযকার শিক্ষা করিয়া এর অর্থের প্রতি লক্ষ রাখিয়া জবানী বা জিহ্বা দ্বারা “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ জিকির করা।” (সূত্র: সিররুল আসরার)।

শরীয়তের হজ্জ করা জিয়ারত বা তাওয়াফ করাতে হয়। পক্ষান্তরে মারিফতের হজ্জের জিয়ারতের বস্তু হলো কলব বা দিল কাবা। আর এই দিল কাবায় যার যিয়ারত হয়েছে সেই পরিপূর্ণ হাজী হয়েছে।

তাই এক সাধক বলেন,

দিল কাবায় যার যিয়ারত হয়

হাজার হাজী তার তুল্য নয়।

মারিফতের হজ্জের বিবরণ দিতে গিয়ে বড় পীর আব্দুল কাদির জিলানী (রাঃ) বলেন, প্রকাশ্য কাবা ঘর জিয়ারতকারী সেজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখবে, আর বাতেনী কাবা তথা দিল কাবা ক্বলব কে আল্লাহর দর্শন করার অভিলাষে পবিত্র রাখবে। এরপর পবিত্র রুহের জ্যোতির সাথে এর এহরাম বাঁধবে এবং ক্বলবের কাবায় প্রবেশ করিয়া, আল্লাহ নামের অমর হয়ে থাকবে।

আস্তে আস্তে অন্তরস্থলের মধ্যেখানে লতিফায়ে সেরর মাকামের দিকে রওয়ানা হবে তারপর নফসে আম্মারা কুরবানী করতে হবে। সূত্র: সিররুল আসরার কৃত গাউছে পাক আবদুল কাদির জিলানী (রা:)

      শরীয়তের হজ্জের একটি বিশেষ দিক হলো- কাবা শরীফ কে সাতবার তাওয়াফ করা। সুফিদের মতে, মারিফতের হজ্জ হলো আরশুল্লাহ, ক্বলবের। সপ্তম স্তরে সাতবার তাওয়াফ করা।

      শরীয়তের হজ্জের কুরবানী মিনার গিয়ে কোন পশু দিতে হয়, মারিফতের হজ্জের কুরবানী নিজের নফসকে কুরবানী করতে হয়। (মানুষের নিকট তার প্রাণ বা নফস হলো সবচেয়ে প্রিয় বস্তু)।

      রাসুলুল্লাহ (সা.) হযরত উমর (রাঃ) কে বলেন, হে ওমর দৃঢ় বিশ্বাস রাখ, ইনসানের দিল খানায়ে কাবা, মমিনের দিল আল্লাহর আরশ, তাই এই দিল। কাবায়ে হজ্জ করা প্রয়োজন। আমিত্বকে বিলিন করে দিল কাবায় হজ্জ করাকেই মারিফতের হজ্জ বলে।

——————————————————————————————

লিখক: তরিকত ও তাছাউফ গবেষক, রেজভীয়া দরবার শরীফের খলিফা

মাওলানা  গাজী হাবিবুর রহমান রেজভী সুফিবাদী

পীর সাহেব: রেজভীয়া হাবিবিয়া দরবার শরীফ, গোয়াতলা, কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ।