মারেফতের নামাজ কি?


তরিকত ফাউন্ডেশন প্রকাশের সময় : আগস্ট ১, ২০২২, ৬:৪৯ অপরাহ্ণ /
মারেফতের নামাজ কি?

নামাজ শব্দটি ফার্সি। যার অর্থ সংযােগ স্থাপন, স্মরণ, দোয়া, দুরূদ ইত্যাদি। মারেফতের আরেকটি নাম রয়েছে তা হল বাতেন, সালাতের বাংলা হলো, স্মরণ করা, মারেফতের সালাতের অর্থ হল, বাতেনী স্মরণ বা নৈকট্য পাওয়ার স্মরণ। মোট কথা আল্লাহ তায়ালাকে চিনা জানা ও নৈকট্য পাওয়ার স্মরণই মারেফতের সালাত বলে।

সালাত দুই প্রকার- ১। জাহেরী সালাত বা শরীয়তের সালাত

২। বাতেনী সালাত বা তরিকতের সালাত ।

কুরআনের ভাষায় ১টি কায়েমী সালাত অপরটি দায়েমী সালাত।

১। জাহেরী সালাত বা শরীয়তের সালাত; দিন রাত পাঁচবার, নিদিষ্ট সময়ে লোক দেখানো, লোক শুনানো, শরীর বা দেহ দিয়ে মসজিদে গমন করিয়া জামাতের সাথে আদায় করিয়া থাকে। জাহেরী নামাজ সঠিকভাবে আদায় করতে হলে, সর্ব প্রথম বাতেনী নামাজকে ঠিক করতে হবে,

কেননা বাতেনী ঠিক না হলে জাহেরী নামাজে একাগ্রতা সৃষ্টি হবে না, নামাজে হাত, পা, উঠা, বসাতেই শুধু নামাজ নয়, নামাজ পড়তে হবে (হুজরি ক্বলবে) একাগ্রচিত্তে, বাতেনী নামাজ সম্পূর্ণ মন দিয়ে, প্রেম দিয়ে। পড়তে হয়; আর এ নামাজেই মেরাজ হয়।

২। বাতেনী সালাত বা তরিকতের সালাতের কোন সময় সীমা নেই, অবিরাম সর্বদায় আদায় করতে হয়। তরিকতের সালাতের মসজিদ হলো ক্বলব। ক্বলব দিয়ে বাতেনী জিহ্বা দ্বারা সর্বক্ষণ স্মরণে থাকাই হলো তরিকত বা মারিফতের সালাত।

মারেফত বা বাতেনী নামাজ হাসিল না হলে, কোনদিনও কামেল হওয়া যায় না। বাতেনী নামাজ মানুষকে কুকর্ম হতে দূরে রাখে, যেমন আল্লাহ বলেন, “ইন্নাচ্ছালাতা তানহা আনিল ফাহশায়ে ওয়াল মুনকার-নিশ্চই নামাজ খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে’ (সুরা আনকাবুত আয়াত-৪৫) কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র, মানুষ নামাজ আদায় করছে, ঘুষও খাচ্ছে, সুদ খাচ্ছে, জিনা করছে, চুরি করছে।

তাহলে কিভাবে নামাজ অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখলো? তরিকত বা মারিফতের নামাজ হাসিল না হলে কখনই নামাজে সফল হবে না। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পথ দেখানো নামাজই বটে। খোদার প্রেমীকগণ সব সময় নামাজে রত থাকে।

পানি খাওরি যেমন সারা দিন পানি থেকেও তার পানি তৃষ্ণা মিটে না, সেই রূপ আল্লাহর এশক বা প্রেমে বিভোর চিত্তে মানুষ নির্দিষ্ট ওয়াক্ত মতে আদায় করে ও তৃপ্ত হয় না। বরং সব সময় নামাজ বা আল্লাহর স্মরণে রত থাকে। (সূত্র: বেলায়াতে মোতলাকা)।

শরীয়তের নামাজের কেবলা হলো বাইতুল্লাহ, তরিকত বা মারেফতের নামাজের কেবলা হলো, মাশুকের চেহেরা। এশকের নামাজ রুকু সেজদা ছাড়াই হয়। প্রেম, সৃষ্টি হতেই সমস্ত কেবলাকে বিনাশ করে দেওয়া হয়েছে, তাই আশেকের কেবলা মাশুকের চেহেরা ছাড়া অন্য কিছু নয়। (মাকতুবাতে সাদী)।

 

শরীয়তের নামাজের যেমন মসজিদ আছে, তরিকত বা মারিফতের নামাজেরও মসজিদ আছে তা হলো ক্বলব। ক্বলবে যে নামাজ আদায় করা হয় তাকেই তরিকত বা মারেফতের সালাত বলে। (তথ্য সিররুল আসরার)

যেমন হাদীস শরীফে আছে , নবীজি বলেছেন – “ইন্নাল মারিফাতু ফিলুল ক্বালবী।” (অর্থ: নিশ্চই মারেফত হলো ক্বলবের কাজ) বুখারী ১ম খন্ড ৭ পৃষ্ঠা ।

* শরীয়ত ও মারেফতের সালাত মিলিয়ে মিশ্রিত হলেই, তখনই সালাত পূর্ণতা লাভ করে। সুতরাং ক্বলব দ্বারা যে স্মরণ করা হয় তাকে মারেফতের সালাত বলে।

 

লিখক : তরিকত ও তাছাউফ গবেষক, রেজভীয়া দরবার শরীফের খলিফা

পীর গাজী হাবিবুর রহমান রেজভী সূফিবাদী।

পীর সাহেব : রেজভীয়া হাবিবিয়া দরবার শরীফ, গোয়াতলা, কটিয়াদি, কিশোরগঞ্জ।

☎ হুজুরের সাথে যোগাযোগঃ- 01715-261408