মোরাকাবা কি? কিভাবে মোরাকাবা করতে হয়?


তরিকত ফাউন্ডেশন প্রকাশের সময় : আগস্ট ৩, ২০২২, ১১:৫৩ অপরাহ্ণ /
মোরাকাবা কি? কিভাবে মোরাকাবা করতে হয়?

মোরাকাবা অর্থ ধ্যান করা, গভীর চিন্তা করা বা গবেষণা করা ইত্যাদি। জগতের ধর্মের নিগুঢ় ব্যবস্থাপত্রই হচ্ছে মোরাকাবা। আমাদের আকা মাওলা হুজুর পুর নূর রাছুলুল্লাহ হেরাগুহায় একাধারে ১৫ বছর ধ্যান সাধনা তথা মোরাকাবা করেছেন।

মোরাকাবা শিক্ষার বিষয়টি শরীয়ত চর্চার মাধ্যমে দেখা যায় না, এ শিক্ষা কেবল খাটি পীর বা আউলিয়াদের মজলিশেই পাওয়া যায়। তরিকতে মোরাকাবা ছাড়া সাধনার স্তর অতিক্রম করা সম্ভব নয়।

মোরাকাবা করলে কি হয়?

১। মোরাকাবা করলে হৃদয়ের হিংসা বিদ্বেষ দূর হয়।

২। মোরাকাবা করলে দিলের ময়লা আবর্জনা দূর হয়।

৩। মোরাকাবা করলে দিলের পাপ মোচন হয়।

৪। মোরাকাবা করলে দিলের মধ্যে মহব্বত পয়দা হয়। ৫। মোরাকাবা করলে ক্বলবের চোখ খুলে যায়।

৬। মোরাকাবা করলে আল্লাহর রত্নের সন্ধান পাওয়া যায়। সাধণার মধ্যে আল্লাহকে পাওয়ার জন্য, সবচেয়ে বড় সাধনা হলো মোরাকাবা।

মোরাকাবা সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন- [ويتفكرون في خلق السماوات والارض] বাংলা উচ্চারণ: ওয়া ইয়াতা ফাক্কারুনা ফি কালকিছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদি। অর্থ- “তারা আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টির রহস্য নিয়ে মোরাকাবা বা চিন্তা গবেষণা করে”। -(সূরা ইমরান আয়াত ১৯১)

فاذا فرغت فانصبوالى ربك فارغب বাংলা উচ্চারণ: ফাইজা ফারাগতা ফানছাব ওয়াইলা রাব্বিকা ফারগাব। অর্থ- “যখন অবসর হও, প্রতিপালকের কাছে একান্তভাবে নিমগ্ন হও”। (সূরা ইনশিরাহ আয়াত ৭-৮) [واذكر اسم ربك وتبتل اليه تبتيلا । বাংলা উচ্চারণ: ওয়াজকিরুস মা রাব্বিকা ওতাবাত্তাল ইলাহি তাবতিলা।

অর্থ- তুমি তোমার প্রতি পালকের নাম স্মরণ কর এবং একনিষ্ঠভাবে তাতে মগ্ন হও। (সুরা মুজাম্মিল আয়াত-৮)।

মোরাকাবা সম্পর্কে নবীজি বলেন, হযরত যার (রা:) হইতে বর্ণিত নবীজি বলেছেন, তোমরা আল্লাহর সৃষ্টি সম্পর্কে মোরাকাবা কর, আর যারা আল্লাহর সৃষ্টির ব্যাপারে চিন্তা গবেষণা করবে না, তারা ধ্বংস হয়ে যাবে। -(কানযুল উম্মাল)।

      হযরত আবু দারদা (রা:) হইতে বর্ণিত তিনি বলেন, এক ঘন্টা মোরাকাবা করা, সারা রাত্র জেগে ইবাদত করার চেয়েও উত্তম। (বাইহাকী হাদীস নং-১১৮)

      হাদীস শরীফে আরও আছে, এক ঘন্টা মোরাকাবা করলে ৬০ বছর নফল ইবাদতের চেয়ে উত্তম। (সিররুল আসবার)

মোরাকাবার শর্ত

১। হক্কানী পীরের সহচর্য নেওয়া।

২। মুর্শিদের রুহানী তাহাজ্জুহ ও ফয়েজ নেওয়া। (সত্যবাদীদের সঙ্গী হও সুরা তওবা-১১৯)

৩। মারেফতের বিদ্যা অর্জন, মারেফতের বিদ্যা ছাড়া বাতেনী রাস্তার সন্ধান পাওয়া যায় না।

৪। চোখ বন্ধ করে আদায় করা, জাহেরী চোখ বন্ধ করলে বাতেনী চোখ খুলিয়া যায়। ডুবুরীরা যেমন গভীর সমুদ্রে ডুব দিয়ে মনি মুক্তা তুলে আনেন, তেমনি মানুষ ও তার দিলের মধ্যে ডুব দিয়ে জগতের সবচেয়ে, মূল্যবান রত্ন তুলে আনতে পারেন।

মোরাকাবা নিয়ম

চোখ বন্ধ করে নামাজের মত বসে, খেয়াল কলবে এনে মোরাকাবা করতে হয়।

মোরাকাবার নিয়ত: আমি মুতাওয়াজ্জুহ আছি আমার ক্বলবের দিকে, আমার ক্বলব মুতাওয়াজ্জুহ আছে আমার মুর্শিদের ক্বলবের দিকে, আমার মুর্শিদের ক্বলব মুতাওয়াজ্জুহ আছে আমার দাদা পীরের ক্বলবের দিকে,

আমার দাদা পীরের ক্বলব মুতাওয়াজ্জুহ আছে গাউছে পাকের ক্বলবে দিকে, গাউছে পাকের ক্বলব থেকে ও কাদরীয়া তরিকার নিছবত থেকে, আমার ক্বলবে রুহানী তাওয়াজ্জুহ ও ফয়েজ আসুক এবং আল্লাহ আল্লাহ জিকির জারী হউক…..।

 

► লিখক : তরিকত ও তাছাউফ গবেষক, রেজভীয়া দরবার শরীফের খলিফা

পীর গাজী হাবিবুর রহমান রেজভী সূফিবাদী।

পীর সাহেব : রেজভীয়া হাবিবিয়া দরবার শরীফ, গোয়াতলা, কটিয়াদি, কিশোরগঞ্জ।

☎ হুজুরের সাথে যোগাযোগঃ- 01715-261408